রবিবার, ১৭ জানুয়ারী ২০২১, ০৫:০৭ পূর্বাহ্ন
নিজস্ব প্রতিবেদক: উত্তরের জেলা পঞ্চগড়, কুড়িগ্রামের পর এবার কুয়াশায় ঢাকা পড়ছে রাজশাহী অঞ্চল। রাজশাহীতে এখনো জেঁকে বসেনি শীত। শীত না পড়লেও ঘনকুয়াশায় ঢাকা পড়ছে পুরো উত্তরাঞ্চল। বিকেল তিনটার পর থেকে ঘনকুয়াশা শুরু হচ্ছে, চলছে পরদিন বেলা ১০টা পর্যন্ত। রাজশাহীতে দিনের তাপমাত্রাও কমে এসেছে। বর্তমান যে তাপমাত্রায় বিরাজ করছে তাতে শীত পড়ার কথা। অথচ শীতের তেমন দাপট না থাকলেও এ অঞ্চল কুয়াশার চাদরে ঢাকা পড়ছে।
ঘনকুয়াশায় আবরণে মাঠ-ঘাট অন্ধকার হয়ে থাকছে। সন্ধ্যার আগে থেকেই যানবাহনগুলোকে হেড লাইট জ্বালিয়ে চলতে হচ্ছে। বিশেষ করে এই ঘনকুয়াশা এবার কৃষির উপর বেশি প্রভাব ফেলতে শুরু করেছে। ঘনকুয়াশার কারণে চৈতালি ফলস উৎপাদনে অনেকটা বেগ পেতে হবে কৃষকদের এমনটাও ধারণা করছে কৃষি বিভাগ।
রাজশাহী আবহাওয়া অফিসের জেষ্ঠ্যপর্যবেক্ষক শহিদুল ইসলাম জানান, সোমবার দিনের সর্বনিম্ন তাপমাত্রা ছিল ১৬দশমিক ৬ডিগ্রি সেলসিয়াস। এরআগের দিন রোববার দিনের সর্বনিম্ন তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে ১৪ দশমিক ৯ ডিগ্রি সেলসিয়াস। বাতাসের আদ্রতা ছিল সকাল ৬টায় ৯৯ শতাংশ, সন্ধ্যা ৬ টায় ৮৬ শতাংশ। দিনের সর্বনিম্ন তাপমাত্রা আরো কমে আসবে বলে ধারণা করা হচ্ছে বলে জানান তিনি।
এছাড়াও এই ডিসেম্বর মাসের শেষের দিকে রাজশাহীর উপর দিয়ে প্রথম দফায় শৈত্যপ্রাবাহ বয়ে যাওয়ার সম্ভাবনা আছে। তিনি জানান, শীত না বাড়লেও ইতোমধ্যে উত্তরের কুড়িগ্রাম, পঞ্চগড়, ঠাকুরগাঁসহ বেশ কয়েকটি জেলায় সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত সূর্যের দেখা মিলছে না। একই সাথে উত্তরাঞ্চলের কুড়িগ্রাম, পঞ্চগড়, ঠাকুরগাঁ জেলায় শৈত্যপ্রবাহ চলছে। এতে ধারণা করা হচ্ছে রাজশাহীতেও অতিদ্রুত শৈত্যপ্রবাহ শুরু হবে। আর এবার শৈত্যপ্রবাহ স্থায়ীত্ব বেশি হতে পারে বলেও আবহাওয়া অধিদপ্তর থেকে জানানো হচ্ছে।
এদিকে, শীতের শুরুতে এবার ঘনকুয়াশার দখলে শীতের সকাল ও সন্ধ্যা। শুধু সকাল আর সন্ধ্যাটাই নয়, রাতে কুয়াশার ঘনত্ব এতোটাই বেড়ে যাচ্ছে যে যানবাহন চালকদের চরম বেকায়দায় পড়তে হচ্ছে। বিশেষ করে বিকেল পড়ার পর থেকে ঘনকুয়াশার কারণে যানবাহনগুলো হেড লাইট জ্বালিয়ে রাস্তায় চলতে হচ্ছে। ঘুনকুয়াশার কারণে দুপুরে এক ঝলক সূর্য দেখা গেলেও পুরোদিন দেখা মিলছে না। সন্ধ্যার পর থেকে রাত ৮ টার পর ১০ গজের বেশি দৃষ্টি যাচ্ছে না। কুয়াশার ঘনত্ব এতোটাই বৃদ্ধি পাচ্ছে যে রাতে রাস্তায় চলা মুশকিল হয়ে পড়ছে। বিশেষ করে গ্রামাঞ্চলে কুয়াশার পরিমাণ বেশি বলে মনে করছেন লোকজন। গ্রামাঞ্চলেও শীতের দাপট না থাকলেও এখন কুয়াশার দখলে।
দেখা গেছে, গতকাল রোববার সকাল ১০ টা থেকে বিকেল ৩ টা পর্যন্ত সূর্যের মুখ দেখা গেছে। এরপর থেকে আর সূয্যের মুখ দেখা যায়নি। তিনটার পর থেকে ঘনকুয়াশা শুরু হয়। সন্ধ্যার মধ্যে কুয়াশায় সব অন্ধকার হয়ে যায়। তিনটার পর থেকে ছোটবড় যানবাহনগুলোকে হেড লাইট জ্বালিয়ে চলতে দেখা যায়। বিশেষ করে সন্ধ্যার পর কুয়াশার চাদরে ঢাকা পড়ে পুরো রাজশাহী অঞ্চল। গত তিনদিন থেকে ঘনকুয়াশা পড়ার কারণে লোকজনদের বাইরে দেখা যাচ্ছে না। রাত ১০ টার পর রাজশাহী নগরীর রাস্তাঘাট হয়ে যাচ্ছে ফাঁকা। পায়ে হেটে চলাচল করা লোকজনেরও দেখা মিলছে না। সন্ধ্যার পর লোকজন কাজ সেরে চলে যাচ্ছেন নিজ গন্তব্যে। রাতে কুয়াশার কারণে অতি প্রয়োজন ছাড়া লোকজনদের বাইরে বের হতে দেখা যাচ্ছে না।
এদিকে কুয়াশার কারণে এবার কৃষকরা পড়েছেন মহাবিপাকে। রাজশাহী অঞ্চলে এখন চলছে বোরো ধান রোপনের জন্য বীজতলা প্রস্তুতের কাজ। ইতিমধ্যে রাজশাহীতে আগাম জাতের ধান রোপণের জন্য বীজতলা তৈরি ও বপনও করছেন কৃষকরা। কিন্তু কুয়াশার কারণে মাটি ভেদ করে বীজ গজাবে কিনা তা নিয়ে দুশ্চিন্তায় রয়েছেন কৃষকরা। বিশেষ করে আলু চাষিরা বেশি বেকায়দায় রয়েছেন। ইতোমধ্যে রাজশাহীতে আলুর জমি তৈরি ও বীজ রোপণ প্রায় সম্পন্ন হয়েছে। অনেক কৃষকের আলুর খেতে মাটি ভেদ করে গজিয়ে উঠেছে আলুর সবুজ গাছ। কিন্তু গজিয়ে উঠা এসব আলুর গাছে কুয়াশার কারণে বাড়ছে না। দেখা দিচ্ছে নানা ধরনের রোগ। বাড়ন্ত আলুর গাছ কুয়াশার কারণে মাটিয়ে নুইয়ে পড়তে শুরু করছে। সকাল সন্ধ্যা আলুর খেতে কীটনাশক স্প্রে করেও গাছ রক্ষা করতে হিমশিম খাচ্ছেন কৃষকরা।